মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গা নেবে না বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল বুধবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকটের কথা তুলে ধরবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এ অধিবেশনে অংশ নিচ্ছে। বিশ্ব সম্প্রদায় যাতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানকে গুরুত্ব দেয় সে বিষয়ে আহ্বান জানাবে বাংলাদেশ।
মন্ত্রী বলেন, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্কে বাংলায় বক্তব্য দেবেন।
মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিষেধাজ্ঞা কী কারণে তা বাংলাদেশ জানে না। বাংলাদেশ এ বিষয়ে জানতে চায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। এরপর তিনি নিউ ইয়র্ক যাবেন।
আবারও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঠেকাতে বাংলাদেশ কী করছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে কিছুটা সংঘাত হচ্ছে। এটি জানার পরপরই আমাদের দিক থেকে যেসব ব্যবস্থা নেওয়ার সেগুলো আমরা নিয়েছি। প্রথমত, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা কোনো নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকতে দেব না। সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ অন্যদের সতর্ক করা হয়েছে। তারা সজাগ আছে।’
মন্ত্র্রী বলেন, ‘আমরা মিয়ানমার সরকারকে বারবার অনুরোধ করেছি, তোমাদের গোলাগুলি আমাদের এখানে যেন না আসে। ওখানে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার আর্মির মধ্যে সংঘাত চলছে। ওরা সীমান্তের খুব কাছে থাকে। মিয়ানমার বাহিনী যখন ওদের ওপর হামলা চালায় তখন বিক্ষিপ্তভাবে বুলেট আমাদের দিকে আসে।’
মন্ত্রী আরো বলেন, “মিয়ানমার ঝামেলায় আছে, যেহেতু সেখানে সংঘাত চলছে। মিয়ানমার আশ্বাস দিয়েছে, আমাদের দিকে তাদের লোক আসবে না। আমরা ‘সিল’ (সীমান্ত বন্ধ) করে দিয়েছি।”
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ এবার নতুন কী বলবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাঁচ বছরে একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি। বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরো জোর দেওয়া উচিত—এটি আমরা তুলে ধরব।’
হঠাত্ ভারতে না যাওয়ার পর এবার যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ যাচ্ছি। সবই ওপরওয়ালার ইচ্ছা। আমরা কখনো জানি না। এখনো যদি পরে অসুবিধা হয়ে যায়, মৃত্যুও হতে পারে।’
গত সফরে না যাওয়া নিয়ে অনেক রটনা ছিল—সাংবাদিকদের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ আনন্দে এসব বলে। আমি আশা করি, তারা বুঝতে পারবে।’
ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞায় অন্যদের কষ্ট হয়। যাদের আঘাত করার তারা কষ্টে আছে কি না জানি না।’ তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার কারণে মুদ্রাস্ফীতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে প্রভাব ফেলেছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিলে এটি আরো ফলপ্রসূ হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। এ অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল আগামী ২০ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে পৌঁছাবে।’
মোমেন বলেন, নিউ ইয়র্কে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী আগামী ১৫ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করবেন। নিউ ইয়র্ক সফর শেষে তিনি ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের এই সাধারণ অধিবেশনে করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকটের পাশাপাশি খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, বহুপক্ষীয়তাবাদ, টেকসই আবাসন, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল অবকাঠামো গঠনের বিষয়গুলো আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল গুরুত্বপূর্ণ এসব ইস্যুতে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত অগ্রাধিকার বিষয়গুলো তুলে ধরবে।
মিয়ানমারে দিনের চেয়ে রাতে গোলাগুলি বেশি
মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে (রাখাইন) এখন দিনের চেয়ে রাতের বেলায় গোলাগুলির ঘটনা বেড়েছে। গত সোমবার থেকে গতকাল পর্যন্ত তিন দিন সীমান্ত এলাকায় দিনের বেলায় গোলাগুলির শব্দ কম শোনা গেছে। তবে রাতে সীমান্তের এপারের বাসিন্দারা ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শুনতে পায়।
এদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বেশ কিছু দূরে মঙ্গলবার মিয়ানমারের একটি হেলিকপ্টারও ভূপাতিত করা হয়েছে বলে সীমান্ত এলাকার নানা সূত্রে জানা গেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘দিনের বেলায় এখন গোলাগুলির শব্দ আমাদের সীমান্তে কম শোনা যাচ্ছে। তবে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।
পাঠকের মতামত